২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোল (part -2)
২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোল
সংলাপ ও সুপ্রিম কোর্টের রায়
২০ - ২২ জুলাই
২০ জুলাই
তৃতীয় দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল। সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন অংশে কারফিউ কার্যকরের অংশ হিসেবে টহল দেয়। ১৯ জুলাই মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন মন্ত্রীর বৈঠক হয়। তবে বৈঠক ও উত্থাপিত দাবিগুলো নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। কারফিউর মধ্যেই ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা-বনশ্রী, বাড্ডা, মিরপুর, আজিমপুর এবং মানিকনগরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ অন্তত ১০ জন নিহত এবং ৯১ জন আহত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে।

চতুর্থ দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল এবং কারফিউ অব্যাহত ছিল। ভোরে ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় নাহিদ ইসলামকে পাওয়া যায় এবং তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সকাল ১০টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে দুপুর ১টায় রায় ঘোষণা করা হয়, যেখানে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এদিন ঢাকায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনকারীদের সাথে সারাদিন ধরে পুলিশের সংঘর্ষ চলে। সহিংসতায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাঁচজন নিহত হন। সেতু ভবন ভাঙচুর, রামপুরায় বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ বিভিন্ন মামলায় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিপুণ রায় এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি পক্ষ ৯ দফা দাবি জানিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
২২ জুলাই
পঞ্চম দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল এবং তৃতীয় দিনের মতো কারফিউ বলবৎ ছিল। এক নির্বাহী আদেশে ২৩ জুলাই, মঙ্গলবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কিছু ব্যবসায়ী বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও সহিংসতার জন্য বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং শিবিরকে দায়ী করেন এবং আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন। এদিন নাহিদ ইসলাম চার দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন এবং ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দেন।
আন্দোলন স্থগিত ও গণগ্রেফতার
২৩ - ২৮ জুলাই
২৩ জুলাই
ষষ্ঠ দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন অবস্থায় ছিল। তবে রাতের দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। চতুর্থ দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল। ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
২৪ জুলাই
সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকে। সারাদেশে কারফিউ পঞ্চম দিনের মতো বলবৎ থাকলেও তা শিথিল পর্যায়ে ছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান, ফলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯৭-এ পৌঁছায়। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি, যা ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে নিশ্চিত জানা যায়নি। ২৪ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ১,৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জাতিসংঘ বাংলাদেশে সেনা মোতায়েনের সময় তাদের লোগো সংবলিত যান ব্যবহারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার এবং রিফাত রশীদের সন্ধান পাওয়া যায়। দিনশেষে আরও চারজনের মৃত্যুর খবর মেলে, ফলে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০১। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
২৫ জুলাই
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ধীর গতিতে চালু থাকে, তবে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আটটি বার্তা প্রকাশ করা হয়।
২৬ জুলাই
কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক, নাহিদ ইসলামসহ, সাদাপোশাকের একটি দল রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটককে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘শহীদ রুদ্র তোরণ’ নামকরণ করেন। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ।
২৭ জুলাই
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে সমন্বয়ক তিনজনকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) স্বীকার করে। তবে কেন তাদের পরিবারের কাছে না দিয়ে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীদের আটক ও সহিংসতার প্রতিবাদে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, ২৮-৩০ জুলাই সরকারি-বেসরকারি অফিসের সময়সূচি ছয় ঘণ্টা করা হবে। রাতে আরও দুই সমন্বয়ককে আটক করে ডিবি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে সকল আটক শিক্ষার্থীকে মুক্তি দেওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
২৮ জুলাই
ভোরে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নুসরাতকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। বেলা ৩টায় মোবাইল ইন্টারনেট চালু করা হলেও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধ রাখা হয়। বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে। একই দিন ঢাকার সিএমএম আদালতে গ্রেফতার শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের রিমান্ড স্থগিত করা হয়।
রাত ১০টার দিকে পুলিশি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, এই ঘোষণা পুলিশের চাপে এবং নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে। রাত ১১টার দিকে সমন্বয়কদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে পরদিন ২৯ জুলাই দেশব্যাপী নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
নিহত ও আহতের তথ্য
২৮ জুলাই পর্যন্ত অন্তত ২১১ জন নিহত এবং ঢাকায় আহতের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। অধিকাংশ আহত গুলিবিদ্ধ এবং বিশেষ করে মাথা ও চোখে আঘাতপ্রাপ্ত। ১২ দিনে অন্তত ২৫৩ শিক্ষার্থী গ্রেফতার হন এবং তাদের অনেককে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোল পুনঃসূচনা
২৯ জুলাই - ৩ আগস্ট
২৯ জুলাই
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্দোলন চলাকালীন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন ৭৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। প্রথম আলো-এর এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিহতদের অধিকাংশই কম বয়সী ও শিক্ষার্থী। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মন্তব্য করেন, বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করার চেষ্টা চালায়। সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাড্ডা এবং ইসিবি এলাকায় বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়। চট্টগ্রামে বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে গ্রেফতার দেখিয়ে ছয় দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে তার নিখোঁজ থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন ডিবি উত্তর কার্যালয়ের ওসি। আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এটিকে সংবিধানবিরোধী ও প্রতারণামূলক বলে নিন্দা জানায়।
ডিবি হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের মুক্তি এবং শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এদিন কারফিউ দশম দিনের মতো বহাল থাকে, তবে দিনের বেলায় শিথিল করা হয়। ইন্টারনেট চালু হলেও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইউটিউবসহ বেশ কয়েকটি সেবা বন্ধ থাকে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৩০ জুলাই দেশব্যাপী শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে আন্দোলনকারীরা শোক দিবস প্রত্যাখ্যান করে লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে অনলাইনে ছবি প্রকাশ ও প্রচার চালানোর ঘোষণা দেয়।
৩০ জুলাই
সরকার ঘোষিত শোক দিবস প্রত্যাখ্যান করে সাধারণ জনগণ ও আন্দোলনকারীরা লাল রঙ ধারণ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাল প্রোফাইল ছবি ব্যবহারের মাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, সাবেক সেনাপ্রধানসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।
সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনায় ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল চত্বরে মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয় এবং পাঁচজনকে আটক করে।
দুপুরে, ৬ সমন্বয়কের মুক্তির দাবিতে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’ ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন। একইভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লাল কাপড় বেঁধে র্যালি ও সমাবেশ করেন।
বিকেলে, উদীচীসহ ৩১টি সংগঠন পদযাত্রা ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করার সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
সার্বিক পরিস্থিতি
এই সময়ের মধ্যে আন্দোলন দমনে সহিংসতার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। পুলিশের দমন-পীড়ন এবং আন্দোলনকারীদের ওপর দমনমূলক পদক্ষেপ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার ঝড় উঠে। আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয় এবং আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
৩১ জুলাই
হত্যা, গ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে পদযাত্রা
৩১ জুলাই বুধবার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে সারাদেশে "মার্চ ফর
জাস্টিস" (ন্যায়বিচারের জন্য পদযাত্রা) কর্মসূচি পালিত হয়। চট্টগ্রামে সকাল
১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে এবং পুলিশের বাধা অতিক্রম করে আদালত
চত্বরে প্রবেশ করে।
বিকেল ৩টায় ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেওয়া হয়।
১ আগস্ট
ছয় সমন্বয়ক মুক্তি ও জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ
বেলা দেড়টার পর ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া হয়। একই দিনে
সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে ১৬ থেকে ২১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠিত হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘আমাদের বীরদের স্মরণ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ ও সমাবেশ আয়োজন করে। দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ আন্দোলনের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করে।
২ আগস্ট
ছয় সমন্বয়কের বিবৃতি ও সংঘর্ষের ঘটনা
ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তি পাওয়া ছয় সমন্বয়ক এক বিবৃতিতে জানান, ডিবি অফিস থেকে
প্রচারিত ভিডিও বার্তা তাদের স্বেচ্ছায় দেওয়া হয়নি। তারা দাবি করেন,
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই তাদের আটক রাখা হয়েছিল।
সকাল থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি, বায়তুল মোকাররম, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, উত্তরা এবং দেশের অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়। সিলেট, চট্টগ্রাম, বগুড়া, টাঙ্গাইল, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে গণমিছিল চলাকালে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের হামলা

৩ আগস্ট
দ্রোহযাত্রা ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক
শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের আয়োজনে “দ্রোহযাত্রা” কর্মসূচিতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ
নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পূর্বঘোষিত ৯ দফা দাবির পক্ষে সারাদেশে বিক্ষোভ
মিছিল করে।
সন্ধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক করেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করতে একটি প্রতিনিধিদল গঠন করার নির্দেশ দেন।
শিক্ষার্থীরা ৪ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়।
৩ আগস্ট
আহত ব্যক্তির মৃত্যু ও আন্দোলন জোরদার
ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন আহত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা আলোচনার প্রস্তাব দিলেও দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয়
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো পরিকল্পনা নেই।
রাজধানীর আফতাবনগরের ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় মিছিল করে এবং রুয়েটের সামনে জড়ো হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি জানায়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ
রাজধানীর রবীন্দ্রসরোবরে সংগীতশিল্পীদের প্রতিবাদী সমাবেশ শেষে বিকেল চারটার দিকে
বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাত্রা শুরু করে। বিভিন্ন
এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা শহীদ মিনারে জড়ো হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনের
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এক দফা দাবি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ঘোষণা করেন।
সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা
চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসা এবং সংসদ সদস্য মো.
মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে হামলা হয়। গাজীপুরের শ্রীপুরে পুলিশের সঙ্গে
সংঘর্ষে একজন নিহত হন। সিলেটে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন।
রাতে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়
রাত সোয়া ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবলিক ও বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
রংপুরে বরখাস্ত ও প্রতিবাদ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদের
মৃত্যুর ঘটনায় রংপুরে দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের অংশগ্রহণ
ঢাকার মহাখালী ও মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
৪ আগস্ট
সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সংবাদ সম্মেলন
মহাখালী ডিওএইচএসের রাওয়া ক্লাবে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সংবাদ সম্মেলন
অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ৪৮ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান
এম নুর উদ্দিন খান, মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, কায়সার ফজলুল কবিরসহ আরও অনেকে।
সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, "গণ-আন্দোলনের ওপর জুলুম ও অত্যাচারে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহার দুঃখজনক। এ ধরনের রাজনৈতিক সংকট সামরিকীকরণ অনুচিত।"
শেষে তিনি জোর দিয়ে বলেন, "সশস্ত্র বাহিনী কখনো সাধারণ জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি, এবং একটি রাজনৈতিক সংকট সামরিকীকরণকে আমরা তীব্রভাবে বিরোধিতা করছি।
এক দফা দাবি এবং অসহযোগ আন্দোলন (২০২৪)

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সহিংসতায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা আবু সাঈদের মৃত্যু গভীর শোক এবং প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে স্থান পেয়েছে। মৃত্যুর মুহূর্তে তোলা ছবিতে দেখা যায়, দুহাত প্রসারিত করে প্রতিবাদী ভঙ্গিতে দাঁড়ানো অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৩১ জুলাই পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে দেশে ২৬৬ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ৬,০০০ জনের বেশি আহত হন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই "শহীদ" হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহিংসতায় অন্তত ৩২ জন শিশু নিহত হয়েছে।
নিরপরাধ মানুষের হতাহত
পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীর নির্বিচারে গুলিতে নিহতদের মধ্যে আন্দোলনকারীদের
পাশাপাশি নিরীহ পথচারী, নামাজ শেষে বের হওয়া মুসল্লি, দোকানদার, এমনকি বাসার
ছাদে খেলতে থাকা শিশুরাও মারা গেছে। এ সময় শিশু ও কিশোরদের ওপর লক্ষ্য করে গুলি
চালানোর অভিযোগ ওঠে। নিহতদের মধ্যে ১১৩ জন শিশু, যা মোট হতাহতের ৭৫ শতাংশ।
এছাড়াও আইন লঙ্ঘন করে পুলিশ কিশোর শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করে এবং রিমান্ডে নেয়। আন্দোলনকেন্দ্রিক সহিংসতায় আহত ও নিহতদের পরিচয় প্রকাশের দাবি জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাংবাদিকরা।
বেওয়ারিশ লাশ দাফন
সহিংসতায় নিহত এক শিশুসহ ২১ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। পুলিশ
পরিচয় শনাক্ত বা পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর না করেই সেগুলো আঞ্জুমান মুফিদুল
ইসলামকে হস্তান্তর করে। পরে এই সংস্থা লাশগুলো দাফন করে।
ঢাকার হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড়
যাত্রাবাড়ি, উত্তরা, রামপুরা এবং মোহাম্মদপুর এলাকায় ১৮ থেকে ২০ জুলাইয়ের
মধ্যে প্রায় ৪,০০০ জন বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা নেন। অনেক লাশ ময়নাতদন্ত
ছাড়াই দাফন করতে দেখা যায়।
র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে হামলার অভিযোগ
র্যাবের বেল ৪০৭ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের দমনের প্রচেষ্টা ব্যাপক
সমালোচনার জন্ম দেয়। হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়
এবং গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। তবে র্যাব দাবি করে, "কোনো ধরনের গুলি বা
আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি, শুধুমাত্র কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড
ছোড়া হয়েছে।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
২৪ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিহতদের সংখ্যা ও তথ্য নিয়ে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নিরপেক্ষ তথ্য দিতে অক্ষম হন। সরকারের দমন-পীড়নের
সমালোচনা বিভিন্ন মহলে তীব্র হয়ে ওঠে।
"জনসাধারণ কতজন মারা গেছেন, তার কোনও হিসাব আমাদের কাছে নেই।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের এই বক্তব্য আন্দোলনে হতাহতের বিষয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে। তিনি জানান, “কতজন মারা গেছেন, তার কোনও নির্দিষ্ট হিসাব আমাদের কাছে নেই। কোনও থানায় এ নিয়ে মামলা দায়ের হয়নি। পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করছে, এ বিষয়ে পরে বলা যাবে।”
এদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, সংঘাতে ঢামেক হাসপাতালে ৮১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৬০ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়, আর বাকিরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আন্দোলনের সময় ৪২৪ জন চোখে আঘাত পেয়ে চিকিৎসা নেন, যাঁদের মধ্যে ২৭৮ জনের অস্ত্রোপচার করতে হয়। বেশিরভাগের চোখ ছররা গুলির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি
পুলিশ সদর দফতর জানায়, আন্দোলন শুরুর পর থেকে
তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং
১,১১৭ জন আহত হন। পুলিশের ২৩৫টি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প এবং
২৮১টি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ১৭-২৩ জুলাইয়ের মধ্যে দেশে
১১৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে
ঢাকায় ৯০টি।
নিহতদের তালিকা

- আবু সাঈদ (২২): বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
- মীর মুগ্ধ (২২): বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র।
- মো. ফারুক: একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী।
- ওয়াসিম আকরাম: চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
- ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২৪): ওমরগনি এমইএস কলেজের ছাত্র।
- মো. শাহজাহান (২৫): নিউমার্কেট এলাকার হকার।
- সবুজ আলী (২৫): ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং ছাত্রলীগ কর্মী।
- সিয়াম (১৮): গুলিস্তানের একটি ব্যাটারির দোকানের কর্মচারী।
- আসিফ ও সাকিল: নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
- দিপ্ত দে: মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
- দুলাল মাতবর: গাড়ি চালক।
- ফারহান ফাইয়াজ: ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
- ইয়ামিন: মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থী।
- মো. জিল্লুর শেখ: ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী।
- শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন: এমআইএসটির কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী।
- রিয়া গোপ (৬): বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
- সাফকাত সামির (১১): একটি মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
- তাহমিদ তামিম (১৫): নরসিংদীর নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
- মো. ইমন মিয়া (২২): শিবপুরের সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের শিক্ষার্থী।
প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ
নিহতদের তালিকায় শিশু, শিক্ষার্থী, হকার এবং সাধারণ কর্মজীবী মানুষদের উপস্থিতি
আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতার ব্যাপকতা প্রকাশ করে। এসব তথ্য সরকারের অবস্থান
এবং সহিংসতার নৈতিকতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তুলেছে।
ক্ষয়ক্ষতি: সংঘাত ও ইন্টারনেট বিভ্রাট
১৮ জুলাই ২০২৪: সহিংসতা ও ভাঙচুর
- রংপুরে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির ৭টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়।
- বিটিভি-তে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ফলে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
- মহাখালীতে অবস্থিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
- বনানীর সেতু ভবন ভাঙচুর হয়।
- উত্তরা ও মিরপুরে র্যাবের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর এবং মিরপুর-১০ গোলচত্বরে ফুটওভার ব্রিজে অগ্নিসংযোগের কারণে মেট্রোরেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়।
১৯ জুলাই ২০২৪: ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ধারাবাহিকতা
- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আশপাশে ২৫টি গাড়ি অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর।
- পিবিআই প্রধান কার্যালয়, বিআরটিএ মেট্রো-১ কার্যালয়, এবং রামপুরা থানা ও ফাঁড়িতে হামলা।
- মিরপুরে পাঁচটি পুলিশ বক্স, কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন এবং বেশ কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও ক্ষয়ক্ষতি।
২০ জুলাই ২০২৪: রংপুরে হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ
- সমবায় মার্কেটে হামলা, পুলিশের ট্রাফিক বক্স ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর।
- বঙ্গবন্ধু চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে অগ্নিসংযোগ।
- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য ভাঙচুর।
- নারায়ণগঞ্জ ও মাদারিপুরে ৩৬টি বাসে অগ্নিসংযোগ।
ইন্টারনেট বিভ্রাটের প্রভাব
১৮-২৩ জুলাই ২০২৪: ইন্টারনেট সেবা বন্ধ
- ১৮ জুলাই রাত ৯টা থেকে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ।
- ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ২৩ জুলাই সীমিত পরিসরে চালু হয়।
- মোবাইল ইন্টারনেট ২৮ জুলাই পুনরায় চালু হয়।
- সরকারি নির্দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, যদিও সরকার প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য এড়িয়ে যায়।
ক্ষতির হিসাব
- ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ১০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
- ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং আরও ৫ কোটি মোবাইল গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হন।
- গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল প্রদান, মোবাইল ব্যাংকিং, ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন কেনাকাটা, বিমানের টিকিট কেনা, এবং পড়াশোনাসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
ফ্রিল্যান্স ও সফটওয়্যার খাত
- বেসিস-এর তথ্যমতে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে সফটওয়্যার খাতের ক্ষতি দাঁড়ায় ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।
- ফ্রিল্যান্সাররা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, কারণ আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া
- ক্লাউডফ্লেয়ার রাডার সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে ইন্টারনেট বিভ্রাটের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
- ইন্টারনেট সোসাইটি জানায়, বাংলাদেশে মোট ৫ দিন ১২ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
মোট ক্ষয়ক্ষতির চিত্র:
এমন সঙ্কটজনক পরিস্থিতি শুধু সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণই নয়, বরং
অর্থনীতির প্রতিটি স্তরকেই গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং কোটাব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশে আন্দোলন, বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়ার একটি বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নিচে বিষয়টির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো:
সুপ্রিম কোর্টের রায়
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে কোটা সংক্রান্ত মামলার শুনানি এবং পরবর্তী রায়ে সরকারি চাকরিতে ৯৩% পদ মেধার ভিত্তিতে এবং মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য বরাদ্দ ৭% কোটা নির্ধারণ করা হয়। আদালত দ্রুত এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দেন।
আন্দোলন এবং গ্রেফতার
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, গ্রেফতার অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
বিতর্ক এবং প্রতিক্রিয়া
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা বজায় রাখার পক্ষে দেওয়া বক্তব্য এবং "রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না" মন্তব্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়।
- এই মন্তব্যের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গাত্মক স্লোগান দেয়, যা বিতর্ক উস্কে দেয়।
- আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা নিন্দা প্রকাশ করে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো আন্দোলন এবং সহিংসতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
- শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সুশীল সমাজ আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান নেন।
- টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিকের মন্তব্যের পর সরকারের বিনিয়োগ বাতিল এবং অধ্যাপক জাফর ইকবালের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
বিদেশি সমর্থন
ভারত, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিরা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন জানায়।
সারমর্ম
কোটা সংস্কার আন্দোলন কেবল প্রশাসনিক বা নীতিগত বিষয়েই সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং সরকারের পদক্ষেপ পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল করলেও আন্দোলনের গভীর ক্ষত ও প্রতিক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে।
Comments
Post a Comment